বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের পদ্ধতিসমূহ - Methods of Foreign Money Exchange
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের পদ্ধতিসমূহ - Methods of Foreign Money Exchange
এক দেশ থেকে অন্য দেশে মুদ্রা স্থানান্তরকে বিদেশে অর্থ বা মুদ্রা প্রেরণ বলে । সাধারণত আমদানির মাধ্যমে সৃষ্ট দেনাদার অথবা শ্রমদানের মাধ্যমে অর্জিত মুদ্রা এক দেশ হতে অন্য দেশে প্রেরিত হয় । বিদেশে মুদ্রা প্রেরণের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হলো –
১। স্বর্ণঃ Gold
স্বর্ণ বা স্বর্ণমুদ্রার মাধ্যমে বিদেশে মুদ্রা প্রেরণ করা যায় । একসময় ছিল যখন এ পদ্ধতিতে বিদেশে মুদ্রা প্রেরিত হতো । স্বর্ণের দুষ্প্রাপ্যতা, অধিক ঝুঁকি ও প্রতারণার ভয়ে সময়ের আবর্তে এ পদ্ধতি হ্রাস পেয়েছে ।
২। ব্যাংকের আজ্ঞাপত্র বা ব্যাংক ড্রাফ্টঃ Bank Draft
দেশীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব করে প্রয়োজনীয় মুদ্রা কমিশনসহ জমা দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ করা যায় । এর মাধ্যমে ব্যাংক তার বিদেশের শাখায় বা প্রতিনিধিকে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মুদ্রা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদানের নির্দেশ দেয় ।
৩। বৈদেশিক বিনিময় বিলঃ Foreign Bill of Exchange
বিদেশে মুদ্রা প্রেরণের সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম হলো বৈদেশিক বিনিময় বিল । পাওনাদার এটি প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য দেনাদারের কাছে পাঠায় । দেনাদার তাতে সম্মতি দিলে তা আইনসম্মত দলিলে পরিণত হয় । প্রাপক তার দেশের নির্ধারিত ব্যাংক থেকে এরূপ বিল ভাংতে পারে ।
৪। ডাকযোগে মুদ্রা প্রেরণঃ Mail Transfer – M.T
মুদ্রা প্রেরণের উদ্দেশ্যে এ পদ্ধতিতে দেনাদার বা প্র্রেরক কমিশনসহ নির্ধারিত মুদ্রা ব্যাংকে জমা দেয় । ব্যাংক প্রাপকের নাম, ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় মুদ্রা প্রদানের নির্দেশাবলি বিদেশের শাখা বা প্রতিনিধিকে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয় । প্রেরক ও ব্যাংক যথাসময়ে প্রাপককে মুদ্রা সংগ্রহের কথা জানালে তিনি তা সংগ্রহ করেন ।
৫। তারযোগে মুদ্রা প্রেরণঃ Telegraphic Transfer- T.T
এ পদ্ধতিতে ব্যাংকের মাধ্যমে অতি দ্রুত মুদ্রা প্রেরণ করা যায় । প্রেরক নির্ধারিত কমিশনসহ মুদ্রা ব্যাংককে জমা দেয় । ব্যাংক তার বার্তার মাধ্যমে অতি দ্রুত তার বিদেশে শাখা বা প্রতিনিধিকে প্রাপকের পরিচয়সহ নির্ধারিত মুদ্রা প্রদানের নির্দেশ দেয় ।
৬। ভ্রমণকারীর চেকঃ Travellers Cheque
এটি ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা প্রেরণের একটি পদ্ধতি । নির্ধারিত ফিসহ মুদ্রা জমা রেখে ব্যাংক ভ্রমণকারীকে এক বা একাধিক চেক ইস্যু করে । এ চেকের মাধ্যমে ব্যাংক তার বিদেশে শাখা বা প্রতিনিধিকে ভ্রমণকারীর প্রাপ্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে ।
৭। নগদ প্রত্যয়পত্রঃ Cash Letter of Credit
দেনাদার বা আমদানিকারক নগদ মুদ্রা জমা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানিকারক বা পাওনাদার বরাবর এরূপ প্রত্যয়পত্র ইস্যু করিয়ে দেয় । প্রাপক তার দেশের নির্দিষ্ট ব্যাংকে প্রত্যয়পত্র উপস্থাপন করে মুদ্রা সংগ্রহ করে ।
৮। ব্যক্তিগত চেকঃ Personal Cheque
সুসম্পর্ক আছে এমন দুটি দেশের মধ্যে ব্যক্তিগত চেকের মাধ্যমে মুদ্রা প্রেরণ কাজ সম্পাদিত হয় । এ পদ্ধতিতে প্রেরক তার নিজের হিসাবের চেক প্রাপকের বরাবর পাঠিয়ে দেয় । প্রাপক নির্দেশনাকারী ব্যাংকের যে কোন শাখায় চেক উপস্থাপনের মাধ্যমে মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারেন ।
৯। আন্তর্জাতিক মানি অর্ডারঃ International Money Order
চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মানি অর্ডারের মাধ্যমে মুদ্রা প্রেরণ করা যায় । এ পদ্ধতিতে নির্ধারিত মাশুলসহ পোস্ট অফিসে মুদ্রা জমা দিয়ে বিদেশে প্রেরণ করা যায় ।
১০। ই-মেইল প্রেরণঃ Electronic Mail Transfer
এ পদ্ধতিতে ব্যাংক এবং সুনামধারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে মুদ্রা প্রেরণ করা যায় । প্রেরক ফিসহ ব্যাংকে মুদ্রা জমা দিলে ব্যাংক একটি গোপন কোড নম্বর প্রদান করে । প্রেরক প্রাপককে কোড নম্বর জানিয়ে দেয় । ব্যাংক তার বিদেশের শাখা বা প্রতিনিধিকে ই-মেইলে সমগ্র তথ্য পাঠায় এবং প্রাপককে প্রদানের নির্দেশ দেয় । প্রাপক নির্দেশিত ব্যাংক বা প্রতিনিধির কাছে গোপন কোড নম্বর উপস্থাপন করে মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারে ।
0 Comments
Thank you for commenting