ব্যাংক ব্যবস্থার প্রাথমিক ধারণা এবং ব্যাংকের শ্রেণী বিভাগ II Basic concept of Banking system and Classification of Bank
ব্যাংক ব্যবস্থার
প্রাথমিক ধারণা - Basic concept of Banking system:
প্রাচীনকালে মানুষ তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ উপাসনালয়, ব্যবসায়ী, স্বর্ণকার, মহাজন প্রভৃতির শ্রেনীর লোকের কাছে নিরাপত্তার জন্য জমা রাখত । আবার প্রয়োজনে সেখান থেকে উত্তোলন করত । একসময় জমা গ্রহনকারীরা দেখল তাদের হাতে প্রচুর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে । তাই আমানতের একটি অংশ জমা রেখে বাকি অর্থ ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করার চিন্তা করলো । পরবর্তীকালে আমানত গ্রহণ, ঋণদান, অর্থ ঋত্তোলন প্রবৃতি কাজ নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য হাতে লেখা রসিদের ব্যবস্থা চালু করল । তখন থেকে ব্যাংক ব্যবস্থা ব্যক্তিক পর্যায়ে না থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে । প্রথম দিকে ব্যাংক ব্যবস্থা একক মালিকানার ভিত্তিতে থাকলেও পরবর্তীকালে অংশীদারি, যৌথ মূলধনি কারবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
In ancient times, people used to deposit their surplus money in temples, merchants, goldsmiths, moneylenders, etc. for security. Again, if necessary, he would lift it from there. Once the depositors saw that they had a lot of money in their hands. So he thought of depositing a portion of the deposit and investing the rest as a loan. Later, he introduced the system of handwritten receipts for smooth operation of deposit taking, lending and lending. Since then, the banking system has taken an institutional form, not at the individual level. Initially the banking system was based on sole proprietorship but later it was established as a partnership, joint venture business.
একসময় রাষ্ট্র তার নিজের অধীনে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ, নোট ও মুদ্রা প্রচলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে । এক পর্যায়ে বৃহদায়তন ব্যাংকিং সুবিধা জনগণের কাছে পৌছে দিতে শাখা ব্যাংক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে । বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংক ব্যবস্থা, বিশেষায়িত ব্যাংক, ই- ব্যাংকিং এসব প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক যেমন নিজের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে,তেমনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে অতুলনীয় অবদান রাখছে ।
At one time the state came forward to establish a central bank to control the money market, issue notes and currency under its own. At one stage, branch banking system was introduced to provide massive banking facilities to the people. At present, the computer technology dependent banking system, specialized banking, e-banking, the bank has been able to develop itself through the provision of these technological services, as well as accelerating the economic development of the country is making an invaluable contribution. That is Basic concept of Banking system.
ব্যাংকের শ্রেণী বিভাগ - Classification of Bank
মানুষের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তার কারণেই ব্যাংকের উৎপত্তি । যদিও একটি ব্যাংকের পক্ষে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিভিন্ন প্রকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয় । এ লক্ষ্যেই সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক । যেমন-
The origin of the bank is due to the economic needs and security of the people. However, it is not possible for a bank to meet the needs of different classes of people. Different types or classification of banks have been created for this purpose. As-
ক. মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংক
খ. কার্যভিত্তিক শ্রেনি বিভাগ
গ. সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিতে শ্রেনি বিভাগ
ঘ. তালিকাভুক্তির ভিত্তিতে শ্রেনি বিভাগ
ক. মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংক - Types of Banks on the basis of ownership
১। সরকারি ব্যাংক : যে সব ব্যাংক সরকারি উদ্যোগে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে সরকারি ব্যাংক বলে । বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকও জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি মালিকানায় আনা যায় । যেমন- বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক সহ চারটি ব্যাংক আছে সরকারি ।
২। বেসরকারি ব্যাংক : যেসব ব্যাংক ব্যক্তিগত উদ্যোগে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বেসরকারি ব্যাংক বলে । তালিকাভূক্তির প্রয়োজনেই বেসরকারি ব্যাংক গুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হয় ।
৩। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক : সরকারি ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত ব্যাংকে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক বলে । এসব ব্যাংকের ৫১% সরকারি মালিকানায় এবং ৪৯% বেসরকারি মালিকানাধীন থাকে । যেমন- বাংলাদেমের রূপালী ব্যাংক ।
৪। স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংক : সরকারের বিশেষ আইন ও সংবিধানের বিশেষ অধ্যাদেশ বলে যেসব ব্যাংক গঠিত হয় তাকে স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংক বলে । এসব ব্যাংক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং স্বাধীনভাবে কার্যাবলি পরিচালনা করে । বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংক ।
খ. কার্যভিত্তিক শ্রেনি বিভাগ- Classification of Banks on Functional class division
১। কেন্দ্রীয় ব্যাংক: যেসব ব্যাংক সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে নোট ও মুদ্রা প্রচলন, মুদ্রাবাজরের অভিাভবক, অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার এবং সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তথা সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাং বলে । বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ।
২। বানিজ্যিক ব্যাংক : মুনাফা অর্জনের উদ্দ্যেশ্যে যেসব ব্যাংক জনগণের অর্থ স্বল্প সুদে জমা রাখে এবং অধিক সুদে ঋণ দেয় তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে ।
৩। সমবায় ব্যাংক : দেশের প্রচলিত সমবায় আইন অনুসারে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক কে সমবায় ব্যাংক বলে । এ ব্যাংক তার সদস্যদের অর্থনৈতিক কল্যানের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে । মুনাফা অর্জন বরং সদস্যদের আর্থিক কল্যাণই এ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য ‘বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক’ হচ্ছে বাংলাদেশের সমবায় ব্যাংক ।
৪। কৃষি ব্যাংক : একটি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কৃষকদের অর্থ সরবরাহ, ঋণ প্রদান, সার ও বীজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে কৃষি ব্যাংক । বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ।
৫। শিল্প ব্যাংক : কোন দেশের শিল্প খাতে পর্যাপ্ত মূলধন যোগান দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ, সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য যেসব ব্যাংক গঠিত হয় তাকে শিল্প ব্যাংক বলে । যেমন- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ।
৬। বিনিময় ব্যাংক : যেসব ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিময় নির্ধারণ, লেনদেনের নিষ্পত্তি, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করার লক্ষ্যে গঠিত তাকে বিনিময় ব্যাংক বলে । বাংলাদেশের এ ধরনের কোন ব্যাংক নেই ।
৭। বিনিয়োগ ব্যাংক : কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহের জন্য যেসব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে বিনিয়োগ ব্যাংক বলে । এসব ব্যাংক ঋণ প্রদান ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, ডিবেঞ্জার, সিকিউরিটি ক্রেয়- বিক্রয় করে থাকে ।
৮। মার্চেন্ট ব্যাংক : বিনিময় ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং এর সংমিশ্রনে গড়ে ওঠা ব্যাংককে মার্চেন্ট ব্যাংক বলে । এ ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে প্রত্যয়পত্র ইস্যু করে, বিনিময় বিলে স্বীকৃতি দেয় এবং বিলের অর্থ পরিশোধ করে এবং প্রয়োজনে পরামর্শও প্রদান করে ।
৯। সঞ্চয়ী ব্যাংক : দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণের কাছে পড়ে থাকা অর্থগুলোকে একত্র করে মূলধন গঠনে সহায়তা করে তাকে সঞ্চয়ী ব্যাংক বলে ।
১০। আঞ্চলিক ব্যাংক : কোনো বিশেষ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আঞ্চলিক ব্যাংক বলে । যেমন- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ইত্যাদি ।
এছাড়াও আরো অনেক কার্যভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে :
· স্কুল ব্যাংক
· শ্রমিক ব্যাংক
· ভোক্তা ব্যাংক
· পরিবহন ব্যাংক
· বন্ধকি ব্যাংক
· মিশ্র ব্যাংক
· গ্রামীন ব্যাংক
· দেশীয় ব্যাংক
· আন্তর্জাতিক ব্যাংক
· খূচরা ব্যাংক
· পাইকারি ব্যাংক
গ. সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিতে শ্রেনি বিভাগ - Classification of Banks on the basis of organizational structure
১। একক ব্যাংক : একটি মাত্র অফিসের মাধ্যমে যে ব্যাংক তার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে একক ব্যাংক বলে । যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যাংক বেশি দেখা যায় ।
২। শাখা ব্যাংক : যে ব্যাংক ব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় অফিসের মাধ্যমে দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় একই সাথে বহু শাখা গঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে শাখা ব্যাংক বলে । যুক্তরাজ্য এরূপ ব্যাংকের উৎপত্তিস্থল বিধায় একে বৃটিশ ব্যাংকিং পদ্ধতিও বলে ।
৩। চেইন ব্যাংক : একই শ্রেণিভুক্ত কতিপয় ব্যাংক তার স্বাধীণ সত্তা ও নিজস্ব মূলধন বজায় রেখে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে যে ব্যাংক তার ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করে তাকে চেইন ব্যাংক বলে । বাংলাদেশে এরূপ ব্যাংকের প্রচলন নেই ।
৪। গ্রুপ ব্যাংক : যে ব্যাংক ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী ব্যাংকের অধীনে থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্বল সমজাতীয় ব্যাংকগুলো তাদের ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করে তাকে গ্রুপ ব্যাংক বলে । নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাংককে হোল্ডিং কোম্পানি এবং যাদের নিয়ন্ত্রণ ভার গ্রহন করা হয় তাকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বলে । ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ব্যাংকের উদ্ভব ।
ঘ. তালিকাভুক্তির ভিত্তিতে শ্রেনি বিভাগ - Classification of Banks on the basis of enrollment
১। তালিকাভূক্ত ব্যাংক : তালিকাভূক্ত ব্যাংক বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ব্যাংক সমূহকে বুঝায় । অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ব্যাংক সমূহকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে । একটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য নূন্যতম ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে ।
0 Comments
Thank you for commenting