Principles of Commercial Bank II বাণিজ্যিক ব্যাংকের নীতিমালা
নীতি বলতে কাজের সাধারণ নির্দেশনাকে বুঝায় । যা সতর্কতার সাথে অনুসরণের মাধ্যমেই কোন কাজে সফলতা অর্জন করা যায় । আধুনিক যুগ প্রতিযোগিতার যুগ । ব্যাংকিং জগতে এ প্রতিযোগিতা আরো তীব্র । সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে ব্যাংকিং জগতে টিকে থাকা যায় না । প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে নিয়মিত মুনাফা অর্জন করায় ব্যাংক সমূহকে ব্যাংকিং নীতিমালা মেনে চলতে হয় । এ উদ্দেশ্যে একজন ব্যাংকার বা ব্যাংক ব্যবস্থাপক সাফল্যের সাথে ব্যাংকিং কাজ পরিচালনার জন্য নিম্নোক্ত নীতিমালা মেনে চলেন ।
১। তারল্যে নীতি
২। স্বচ্ছলতার নীতি
৩। নিরাপত্তার নীতি
৪। সঞ্চয় সংগ্রহের নীতি
৫। ঋণদান ও বিনিয়ো নীতি
৬। আস্থা অর্জনের নীতি
৭। মিতব্যয়িতার নীতি
৮। সেবার নীতি
৯। গোপনীয়তার নীতি
১০। সময়ানুবর্তিতার নীতি
১১। অবস্থানের নীতি
১২। সুসম্পর্কের নীতি
১৩। দক্ষ ব্যবস্থাপনার নীতি
১৪। প্রচারের নীতি
১৫। প্রযুক্তিগতি উন্নয়নের নীতি
১৬। নতুনত্ব প্রবর্তনের নীতি
১৭। সুনামের নীতি
তারল্যের নীতিঃ
মক্কেলদের জমাকৃত অর্থ চাহিবা মাত্র ফেরতদানের ক্ষমতাকে ব্যাংকের ভাষায় তারল্য বলে । এ নীতির আলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংক সবসময় এমন পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করে যাতে আমানতকারী যেকোনো সময় তাদের অর্থ উত্তোলন করতে পারে । আমাদের দেশে এর পরিমাণ মোট আমানতের ১৯% ।
সচ্ছলতার নীতিঃ
সচ্ছলতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ তাদের কাঙ্খিত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয় । তা ছাড়া দৈনন্দিন নগদ অর্থের দাবি মেটানোর জন্য ব্যাংককে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ তারল্য হিসেবে রাখতে হয় ।
নিরাপত্তার নীতিঃ
মুনাফা অর্জনের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংক্ষণের পর অতিরিক্ত অর্থ সবচেয়ে লাভজনক ও নিরাপদ খাতে বিনিয়োগ করে । এ জন্য এ ব্যাংক অধিক হারে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা চালায় । এবং স্বল্প মেয়াদে তা অন্যদের ঋণ প্রদান করে ।
সঞ্চয় সংগ্রহের নীতিঃ
বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো জনগণের কাছে পড়ে থাকা সঞ্চয়গুলোকে চাহিবামাত্র দেয় এই শর্তে বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্র করণ । কারণ যে ব্যাংক যত বেশি সঞ্চয় সংগ্রহে সক্ষম সে ব্যাংক তত বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারে ।
ঋণদান ও বিনিয়োগ নীতিঃ
নিরাপদ ও লাভজনক খাতে ঋণদান ও বিনিয়োগের ওপর ব্যাংক ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভরশীল । তাই ঋণদানের সময় সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতাকে বিচার বিশ্লেষণ করে ঋণদান করে এবং নামকরা ও আর্থিকভাবে সচ্ছল প্রতিষ্ঠানে ঋণপত্র বিনিয়োগ করে ।
আস্থা অর্জনের নীতিঃ
জনগণ তার সঞ্চিত অর্থ মূল্যবান দ্রব্যাদি বিশ্বাস করে ব্যাংকে জমা রাখে । তাই সব কাজে সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি অনুসরণ করতে হয় । কেননা, সততা ও বিশ্বস্ততার ওপর ব্যাংকের সাফল্য নির্ভরশীল ।
মিতব্যয়িতার নীতিঃ
প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে এবং মিতব্যয়িতার সাথে ব্যাংকিং কাজ সম্পাদন করতে পারলেই ব্যাংকের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব ।
গোপনীয়তার নীতিঃ
আমানতকারীরা তাদের হিসাব ও জমাকৃত মূল্যবান দ্রব্যের গোপনীয়তা কামনা করে । ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক যত বেশি গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে পারবে, তার প্রতি গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস তত বেশি বৃদ্ধি পাবে ।
অবস্থানের নীতিঃ
বাণিজ্যিক ব্যাংকের সফলতার জন্য উপযুক্ত স্থানে ব্যাংকের শাখা স্থাপন করা জরুরী । অর্থাৎ শিল্প ও ব্যবসায় কেন্দ্রের কাছে এবং মক্কেলের কাছাকাছি এর অবস্থান হলে এ ব্যাংক থেকে বেশি সুবিধা ভোগ করা যায় ।
সুসম্পর্কের নীতিঃ
কর্মী ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাংকার গ্রাহকের মধ্যে সুসম্পর্ক যে কোনো ব্যাংকের জন অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় । ফলে ব্যাংক তার সফলতার জন্য এ নীতিকে কার্যকরভাবে অনুসরণ করে ।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নীতিঃ
বাণিজ্যিক ব্যাংক সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা প্রদানের জন্য উন্নত কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর লেনদেন পদ্ধতি, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করে ।
নতুনত্ব প্রবর্তনের নীতিঃ
গ্রাহকদের নিত্য নতুন সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিভিন্ন আমনত প্রকল্প, মাসিক আয় প্রকল্প, লাখোপতি প্রকল্প প্রভৃতি সার্ভিস প্রদান এর অন্যতম মূলনীতি ।
সুনামের নীতিঃ
মক্কেলদের বিভিন্নমুখী সেবা প্রদানের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করে সুনাম অর্জন করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নীতি । যে কোন ব্যাংকের সুনাম অনেক বড় সম্পদ । সুনাম ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব নয় ।
0 Comments
Thank you for commenting